Paschimbanga Sarkari Karmachari Union

Paschimbanga Sarkari Karmachari Union

2709 21 Organization

karmachari.union.2010@gmail.com karmachariunion.wordpress.com

8, Nabin Chand Baral Lane (1st Floor), Kolkata, India - 700012

Is this your Business ? Claim this business

Reviews

Overall Rating
4

21 Reviews

5
100%
4
0%
3
0%
2
0%
1
0%

Write Review

150 / 250 Characters left


Services

Questions & Answers

150 / 250 Characters left


About Paschimbanga Sarkari Karmachari Union in 8, Nabin Chand Baral Lane (1st Floor), Kolkata

প্রেক্ষাপট :

দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারী কর্মচারীগণ তিল তিল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কর্মচারী স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে রাজ্য সরকারী আন্দোলনের মঞ্চ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি l সংগঠনটির বিকাশের একটি স্তরে, বিশেষ করে ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর উক্ত সংগঠনের নেতৃত্বকারী এক সংকীর্ণতাবাদী ও সুবিধাবাদী অংশ সংগঠনটিকে দখল করে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করতে শুরু করেন l ক্রমান্বয়ে কর্মচারী স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সংগঠনটিকে পার্টি ও সরকারের লেজুড়ে পরিনত করেন এবং সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে সব রকম ভিন্নমতকে স্তব্ধ করার পথ ধরেন l ১৯৭৭ সালে এ রাজ্যে বামফ্রন্ট (!) ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি আরো সংকটজনক হয়ে ওঠে l এই সরকারের বৃহত্তম দলের অনুগামী হয়ে সংগঠনটি কার্যতঃ সরকারের এজেন্সিতে পরিনত হয় l কর্মচারী স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সরকার তথা নিয়োগকর্তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে l স্বাভাবিক কারণে কর্মচারিস্বার্থে গণতান্ত্রিক পথে সংগঠন ও আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে থাকে l

সেই কারণে কর্মচারী আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রকৃত সংগ্রামী সংগঠনের চাহিদা ক্রমেই সামনে উঠে আসতে থাকে l 'নিয়োগকর্তার সাথে বন্ধুত্ব নয়, সংগ্রাম' এই লক্ষ্যকে তুলে ধরার জন্য প্রকৃত সংগ্রামী সংগঠনের প্রয়োজন আরো বেশি জরুরী হয়ে ওঠে l এমতাবস্থায়, সত্তর দশকে এবং পরবর্তীতে আশির দশকে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি থেকে বেরিয়ে আসা সংগঠন, সংগঠক, কর্মী ও কর্মচারীদের এক অংশ ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৮১ সালে গড়ে তোলেন একটি সংগ্রামী সংগঠন "ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন" l

সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে আরো একটি সংগ্রামী শক্তি ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে l রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির অভ্যন্তরে ধারাবাহিক সংগ্রামের পরিণতিতে এই পর্বে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু সংখ্যক কর্মী, সংগঠক ও কর্মচারী প্রাথমিকভাবে প্রচার আন্দোলন চালানোর প্রয়োজনে ১৯৮২ সালে গড়ে তোলেন "কেন্দ্রীয় প্রচার টীম" নামে প্রচারধর্মী একটি সংগঠন l

সংগ্রামী শক্তি হিসাবে দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার ক্ষেত্রে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যের দিক পরিলক্ষিত হয় l পাশাপাশি ঐতিহাসিক কারণেই ভিন্নতর প্রক্রিয়ায় ও প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠায় দুটি সংগঠনের মধ্যে কিছু বিভিন্নতা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত ফারাকও অবশ্যই ছিল l কিন্তু ঐক্যের দিকটি প্রধান থাকার জন্য উভয় ধারার নেতৃত্বই দুটি শক্তির সাংগঠনিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে উভয়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন l তাই ১৯৮২ সালের প্রথম দিক থেকেই দুটি শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয় l পরস্পরের মধ্যেকার ঐক্যের দিকগুলি এবং মতানৈক্যের দিকগুলিকে চিন্হিত করে ঐক্য আলোচনা এগিয়ে যেতে থাকে l

ইতিমধ্যেই এই আলোচনাকালীন সময়েই "কেন্দ্রীয় প্রচার টীম" নামে পরিচিত ধারাটি ১৯৮৬ সালে প্রচার সংগঠনের স্তর থেকে ইউনিয়ন স্তরে উন্নীত হয় এবং "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মচারী সমিতি" নামে আর একটি সংগ্রামী সংগঠন গড়ে ওঠে l

ঐক্য আলোচনার মধ্যে কিছু ছেদ ঘটলেও আলোচনার পথ কখনো বন্ধ থাকেনি l এদিকে কর্মচারী জীবনের উপর সরকার এবং সরকার সেবীদের আক্রমনের তীব্রতা যত বাড়তে থাকে,কর্মচারীদের মধ্যে, উভয় সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে, এমনকি অন্যান্য স্তরের সংগ্রামী কর্মচারীদের মধ্যেও এই দুটি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে থাকে l বিষয়গত অবস্থার চাহিদা ও চাপের এই বাস্তব ঘটনাকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়ে উভয় সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক উদ্যোগের ফলে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ শিয়ালদহে নেতাজী সুভাষ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ঐক্য সম্মেলনের মধ্য দিয়ে "ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন" ও "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মচারী সমিতি" এই দুটি সংগঠনের স্ব স্ব স্বাধীন অস্তিত্বের অবলুপ্তি ঘটিয়ে উভয় সংগঠনের অতীতের সংগ্রামী ধারাবাহিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে এক নতুন সংগঠন "ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নব পর্যায়)" l কিন্তু এখানে উল্লেক্ষ্য যে, এই ঐক্য সম্মেলনের প্রাক্কালে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভঃ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ঐক্য পরিপন্থী মূল নেতৃত্ব অযৌক্তিক দুটি নতুন শর্তকে ঐক্যের শর্ত হিসাবে উপস্থাপন করে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেন l শর্ত দুটি হলো - (ক) WBGEU -র প্রতিষ্ঠা বর্ষকে সংবিধান ইত্যাদি দলিলে উল্লেখ করতে হবে , (খ) উক্ত সংগঠনের সম্মেলনের ক্রমকে নতুন সংগঠনের সর্বস্তরের ক্রম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে l যদিও একইসাথে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, এই শর্ত দুটিকে দৈনন্দিন সাংগঠনিক কার্যকলাপে আনা হবে না l "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মচারী সমিতি" উক্ত মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আস্থা স্থাপন করে বৃহত্তর স্বার্থে শর্ত দুটিকে মেনে নেন l কিন্তু ঐক্য বিরোধী নেতৃত্বের অংশবিশেষ ওই শর্তদুটিকে লাগাতারভাবে সামনে এনে ঐক্যের পরিবেশকে ব্যাহত করতে থাকেন l তদানিন্তন সাধারণ সম্পাদক সহ ঐক্য বিরোধী একাংশ নেতৃত্ব বর্ধমান সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ নতুন সংগঠনটিকে WBGEU -র বিকশিত পরিবর্তিত রূপ হিসাবে উক্ত সম্মেলন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে গেলে ঐক্যকামী প্রতিনিধিরা প্রবল আপত্তি করেন l এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ, কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার ঐক্য প্রয়াসী সংগঠক-নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে সম্মেলন স্থলে কার্যকরী কমিটির এক বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং শর্তগুলিকে আগামীদিনে সমস্ত রকমের বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার সিদ্ধান্ত হয় l দুঃখের বিষয়, ৭ম রাজ্য সম্মেলনের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে পুনরায় উক্ত নেতৃত্ব ৮ম রাজ্য সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনকে ঐক্য ভাঙ্গার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করলেন l এই প্রতিবেদনে পুনরায় লেখা হলো "সাত-সাতটি রাজ্য সম্মেলনের সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর আজ আমরা পুনরায় প্রথম রাজ্য সম্মেলনের স্থল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরেই আমাদের প্রিয় সংগঠনের বৃদ্ধি বিকাশের এক নতুন স্তরে ৮ম রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত হয়েছি" l অর্থাৎ এটি কোনো নতুন সংগঠন নয়, এটি পূর্বতন WBGEU -র বিকশিত রূপ l ঐক্য বিরোধী এই সংকীর্ণ প্রচেষ্টার প্রতিবাদে এবং উক্ত প্রতিবেদন সংশোধনের জন্য সবরকম প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ায়, প্রতিবাদী প্রতিনিধিদের এক বিরাট অংশ উক্ত সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন l

১৯৯১ সালে গড়ে ওঠা ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের ঐতিহ্য এবং সংগ্রামী ধারাকে রক্ষা ও বিকশিত করার প্রয়োজনে সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসা কর্মচারীরা ১১ এপ্রিল ১৯৯৬ ভারত্সভা হলে এক পুনর্গঠন কনভেনশনের মধ্য দিয়ে "ওয়েস্ট বেঙ্গল গভঃ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নব পর্যায়)-৯১" গড়ে তোলেন এবং কর্মচারী স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ লড়াই আন্দোলনের প্রয়াস চালিয়ে যান l এই সময় আরো কিছু সংগঠন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মঞ্চ গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছিলেন l অন্যদিকে WBGEU (NP) সংগঠনের অভ্যন্তরেও ঐক্যকামী আরো এক অংশ ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়াস চালাতে থাকেন l সংগঠনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বহুমুখীন চাপের ফলে WBGEU (NP) নেতৃত্বও যৌথ আন্দোলনের প্রয়োজনে অন্যান্য কয়েকটি কর্মচারী সংগঠনের সাথে অন্যতম উদ্যোগী হিসাবে ২০০২ সালে ভারত্সভা হলে এক যৌথ কনভেনশনের উদ্যোগ নেন এবং কর্মচারীদের সাথে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের যৌথ আন্দোলনের মঞ্চ হিসাবে "যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ" গড়ে ওঠে l

কিন্তু WBGEU (NP) -র মূল নেতৃত্বের এক অংশ যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ-কেও তাঁদের সংগঠনের সম্প্রসারিত মাধ্যম হিসাবে দেখতে চাওয়ার সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ এবং যৌথ আন্দোলনের ক্ষেত্রেও মতাদর্শগত সংগ্রাম সামনে আসতে থাকে l যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ যাতে রাজ্যব্যাপী একটি সংগ্রামী মঞ্চ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে তার জন্য উক্ত নেতৃত্ব ধারাবাহিকভাবে নানা প্রশ্ন তুলে বাধা সৃষ্টি করতে থাকেন l তাঁদের আপত্তির জন্য WBGEU (NP)-91 স্বনামে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের শরিক হতে পারেনি, যৌথ আন্দোলন প্রস্তুতি কমিটির নামে অংশ নিতে হয়েছিল l এই পরিস্থিতিতেও এ রাজ্যে কর্মচারীদের মধ্যে যৌথ আন্দোলনের প্রবল আকাঙ্খার প্রেক্ষিতে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ-র নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ কর্মচারী আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে l ২০০৭ সালে রাজ্যব্যাপী সার্থক গণছুটি কর্মচারীদের মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পরবর্তী আন্দোলনের ধাপ হিসাবে ধর্মঘটের আকাঙ্খা পরিলক্ষিত হয় l এই পর্যায়ে নবপর্যায় নেতৃত্বও তাদের রাজ্য সম্মেলন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মঘটের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন l কিন্তু যৌথ সংগ্রামী মঞ্চর নেতৃত্বে কর্মচারীদের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সম্ভাবনা যতই সৃষ্টি হতে থাকে ততই নবপর্যায় নেতৃত্ব তাঁদের কর্তৃত্বকারী অবস্থা বিপন্ন হওয়ার আশংকা করতে থাকেন এবং যৌথ আন্দোলনকে ঘিরে তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে তাদের সংকীর্ণতা ও স্বৈরাচারী রূপ সুস্পষ্ট হতে থাকে l ধর্মঘটের প্রশ্নে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও, যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের আহ্বায়ক কমঃ ফটিক দে, যিনি উক্ত সংগঠনের প্রতিনিধি, তিনি সহ অন্যান্য শরিক সংগঠনের সাথেও তাঁদের দুরত্ব বাড়তে থাকে l উক্ত নেতৃত্বের সংকীর্ণতা এবং কর্তৃত্বকারী ঝোঁক এমন্স্তরে পৌঁছায় যে, তাঁরা যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ-র বিকল্প একটি সমান্তরাল মঞ্চ গড়ার জন্য সক্রিয় উদ্যোগও গ্রহণ করেন l এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরেই ধর্মঘটের স্বপক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শতবার্ষিকী হল-এ যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ আহুত ১৮ নভেম্বর ২০০৮ কনভেনশনে ধর্মঘটের বিরোধিতা করে এক ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেন l

কনভেনশনের পরে পরেই উক্ত নেতৃত্ব মরীয়া হয়েই তাঁদের নিজস্ব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ, জেলে কমিটিগুলির অবস্থান এবং যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ-র ধর্মঘটের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে ধর্মঘট বিরোধী, কর্মচারিস্বার্থ বিরোধী এক সংকীর্ণ স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন l ধর্মঘটের বিরুদ্ধে কুত্সা প্রচার, তাঁদের সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তির হুমকি প্রদর্শন, সংবাদ পত্রে ধর্মঘট বিরোধী প্রচারের মাধ্যমে কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও সরকারকে সাহায্য করে এ রাজ্যে ৩২ বছরের শ্বাসরোধকারী সরকারী আক্রমন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আহুত ঐতিহাসিক ধর্মঘটকে ভাঙ্গার জন্য যতটা নিচে নামা দরকার তাঁরা তাই করেছেন l অন্যদিকে উক্ত সংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মী ও সদস্য নেতৃত্বের কর্মচারী স্বার্থ বিরোধী এই নগ্ন ভূমিকার বিরোধিতা করে ধর্মঘট সফল করার কাজে ঝাঁপিয়ে পরেন এবং প্রায় ৯৫ ভাগ সদস্যই ধর্মঘট বিরোধী নেতৃত্বকে প্রত্যাখান করে ২২ জানুয়ারী ২০০৯ ঐতিহাসিক ধর্মঘটকে সফল করেন l

এতদসত্ত্বেও নবপর্যায় নেতৃত্ত্বের ভূমিকার কোনো পরিবর্তন না ঘটায় , কলকাতা থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত ধর্মঘটে অংশ গ্রহণকারী এই সংগঠনের অন্যান্য নেতা কর্মী, সংগঠকগণ নিজেদের সংহত করা ও যুক্ত আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ মৌলালি যুবকেন্দ্রে এক সফল কনভেনশনের মধ্য দিয়ে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল গভঃ স্ট্রাগলিং এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরাম' নামে একটি মঞ্চ গড়ে তোলেন l এই কনভেনশন থেকেও একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে WBGEU (NP) নেতৃত্বকে তাদের ধর্মঘট বিরোধিতার ভুল স্বীকার করে যৌথ আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও উক্ত নেতৃত্ব তাতে সাড়া না দিয়ে আরো একবার সংকীর্ণতার ও কর্মচারী স্বার্থবিরোধী ভূমিকার পরিচয় দিলেন l

এই পরিস্থিতিতে, বৃহত্তর পরিসরে কর্মচারী ঐক্যের পথ প্রশস্ত করা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন থেকে উক্ত 'ওয়েস্ট বেঙ্গল গভঃ স্ট্রাগলিং এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরাম' এবং "ওয়েস্ট বেঙ্গল গভঃ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নব পর্যায়)-৯১"-র কর্মী সংগঠকদের মধ্যে অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয় এবং এই উদ্যোগে কো-অর্ডিনেশন কমিটি থেকে বেরিয়ে আসা কর্মচারী বন্ধুরা সহ অন্যান্য কিছু সংগ্রামী সংগঠন, সংগঠক, কর্মী ও কর্মচারী বন্ধুদের সামিল করে একটি বৃহৎ সংগ্রামী সংগঠন গড়ে তোলার বাস্তব পরিস্থিতিও দেখা দেয় l পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন ও বাস্তব রূপায়নের মাধ্যমে ১-২ মে, ২০১০ সুবর্ণ বনিক সমাজ হলে অনুষ্ঠিত ঐক্য সম্মেলনের মাধ্যমে কাঙ্খিত নতুন সংগ্রামী সংগঠনের রূপ দেওয়া হয় l মহান মে দিবসে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের পেশা ভিত্তিক-শ্রেণী ভিত্তিক সংগ্রামী সংগঠন "পশ্চিমবঙ্গ সরকারী কর্মচারী ইউনিয়ন" l

লক্ষ্য ও আদর্শ :

ক) এই সংগঠনের লক্ষ্য হবে শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে ও শ্রমের ন্যায্য মজুরি সহ চাকুরী জীবনের সমৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং পাশাপাশি মজুরি দাসত্ব অবসানের লক্ষ্যেও পরিচালিত শ্রেণী সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়া | এই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রশাসনের সাথে যুক্ত কর্মচারীদের প্রচলিত পার্টি বা গোষ্ঠী ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন করার বিপরীতে বিভিন্ন মতের কর্মচারীদের একটি সংগঠনের পতাকা তলে সংগঠিত করা |

খ) এই লক্ষ্যকে যথাযথ ভাবে রূপায়নের জন্য সংগঠনের সর্বস্তর পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির ভিত্তিতে | গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ হবে এই সংগঠনের প্রাণবস্তু স্বরূপ | গণতান্ত্রিক রীতি, পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রিকতাই হবে এই সংগঠনের নির্দেশিকা শক্তি |

গ) মজুরি দাসত্ব অবসানের মৌলিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর সংগ্রামের সাথে সঙ্গতি রেখে রাজ্য সরকারী শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং পূর্ণ ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের সংগ্রাম পরিচালনা করা |

ঘ) শ্রেণী বিভক্ত শোষণ ভিত্তিক এই সমাজ ব্যবস্থায় রাজ্য সরকারী কর্মচারীগণও অন্যান্য স্তরের শ্রমজীবি মানুষের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাদের শ্রেণী স্বার্থও অভিন্ন | তাই সমাজ বিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম অনুসারে সামগ্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো একটি অংশের সংগ্রামের বিকাশ ও অগ্রগতি কখনই সম্ভব নয় | তাই অন্যান্য স্তরের শ্রমিক কর্মচারীসহ গণতান্ত্রিক ও মেহনতি মানুষের সাথে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা ও অন্যান্য অংশের শ্রমজীবি মানুষের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হবে এই সংগঠনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য |

ঙ) রাজ্য সরকারী কর্মচারীগণ জনগনের অংশ হলেও প্রশাসনে নিয়োজিত থাকার জন্য সরকারের নীতি ও নির্দেশনা কার্যকরী করতে দায়বদ্ধ | স্বভাবতই জনস্বার্থ পরিপন্থী নীতি নিয়মকে কার্যকরী করার ক্ষেত্রে জনগনের সঙ্গে সরকারী কর্মচারীদের দ্বন্দ্বও অনিবার্য্য হয়ে ওঠে | কিন্তু জনগনের সাথে একাত্বতা গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে কর্মচারীদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য | সে কারণে গণতান্ত্রিক চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ সরকারী কর্মচারীগণকে একদিকে সংগ্রামের মাধ্যমে জনগনের আশা আকাঙ্খার সহযোগী হতে হবে, অপর দিকে প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকেও জনগনের সমস্যাবলীকে সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তরিক হতে হবে এবং জনগনের সাথে সংগ্রামী একাত্মতা সৃষ্টির প্রয়োজনেই প্রতিটি কর্মচারীকে প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে |

চ) কর্মচারী আন্দোলনের বর্তমান খন্ড বিখন্ড অবস্থাকে একটি সংগ্রামী ধারায় ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পক্ষে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ধৈর্য্যশীল ভাবে চালিয়ে যেতে হবে |

ছ) শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় মালিক বা সরকার অর্থাৎ কোনো নিয়োগকর্তাই শ্রমিক-কর্মচারীর বন্ধু হতে পারে না | সংগ্রামই হবে দাবি আদায়ের প্রধান হাতিয়ার | এই দৃষ্টিভঙ্গিকে দৃঢ়তার সাথে কর্মচারী আন্দোলনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে |

জ) শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে গ্রন্থগার, নৈশ বিদ্যালয়, চিকিত্সা কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংগঠন উদ্যোগ গ্রহণ করবে |

Popular Business in kolkata By 5ndspot

© 2024 FindSpot. All rights reserved.